০) * নারীর জন্য আযান-ইকামত নেই পুরুষের জন্য তা ওয়াজিব :-
★ পুরুষ :-
সালাতের কার্যাদি শুরু করার প্রাথমিক ধাপ আযান দেওয়া । এ প্রসঙ্গে অসংখ্য হাদীস শরীফ বর্নিত হয়েছে । তন্মধ্যে দু-একটি উল্লেখ করছি । ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ননা করেন, নবী করিম (সঃ) বলেন
যখন সালাতের সময় উপস্থিত হবে তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মাঝের বড়জন ইমামতি করবে ।
— সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৮
ইমাম আহমাদ (রহঃ) বর্ননা করেন- নবীজি (সঃ) বলেন
কোন গ্রামে তিনজন থাকাকালে আযান ও জামা’আত অনুষ্ঠিত না হলে শয়তান তাঁদের উপর বিজয়ী হয় ।
— আহমদ ,হাদিস নং ২১৭১০, সকল ইমামের মতে হাদিসখানা গ্রহনযোগ্য । লা-মাযহাবীদের মান্যবর মুহাদ্দিস শুয়াইব আল আরনাউত এ হাদীসকে হাসান(উত্তম) বলেছেন
★ নারী :-
ইমাম বায়হাকী (রহঃ) সহীহ্ সনদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ননা করেন নবীজী (সঃ) বলেছেন
মহিলাদের উপর আযান ও ইকামত কোনটিই নেই ।
— সুনানে কুবরা, হাদীস নং ১৯২০,
কাজী শাওকানী হাদীসখানাকে সহিহ বলেছেন নাইলুল আওতার ২/৩৯
আরো সহিহ হাদীসে রয়েছে
মহিলাগন অষ্পষ্টভাষী ও আচ্ছাদিত থাকার বস্ত । সুতরাং তোমরা তাঁদের অস্পষ্টতাকে চুপ থাকার দ্বারা এবং ঘরে থাকার দ্বারা তাদের গোপনীয়তাকে রক্ষা কর ।
— তারতীবুল আমালী , হাদিস নং ২০১
১) তাকবীরে তাহ্রীমার সময় পুরুষ চাদর ইত্যাদি হইতে হাত বাহির করিয়া কান পর্যন্ত উঠাইবে, যদি শীত ইত্যাদির কারণে হাত ভিতরে রাখার প্রয়োজন না হয় । স্ত্রীলোক হাত বাহির করিবে না, কাপড়ের ভিতরে রাখিয়াই কাঁধ পর্যন্ত উঠাইবে । - তাহ্তাবী
★ সালাতে পুরুষগণ কান বরাবর হাত উত্তোলন করবে । এ বিষয়ে অনেক হাদীস শরীফ বর্নিত হয়েছে । ইমাম দারা কুতনী (রহঃ) বর্ননা করেন হযরত আনাস (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন সালাত শুরু করতেন তাকবীর বলে দু’হাত এমনভাবে উঠাতেন যে দু’বৃদ্ধাঙ্গুলী কান বরাবর হত ।
— দারা কুতনী, হাদীস নং ১১৪৮, তিন বলেন এ সনদের সকল বর্ননাকারী নির্ভরযোগ্য
কেউ কেউ এ কথা বলতে চেষ্টা করেন যে, হাদীসে তো পুরুষ অথবা নারী কারো কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই বিধায় এটা সকলের জন্য প্রযোজ্য । কিন্তু হুজুরে আকরম (সঃ) মহিলাদেরকে আলাদাভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা বুক বরাবর হাত উত্তোলন করবে ।
★ ইমাম তাবরানী (রহঃ) মু’জামুল কাবীরে হাসান সনদে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন যে,
হযরত ওয়াইল বিন হুজর (রাঃ) নবীজি (সঃ) এর দরবারে আসলে তিনি তাকে বললেন হে ওয়াইল বিন হুজর তুমি যখন সালাত আদায় করবে তখন দু’হাত কান বরাবর উত্তোলন করবে আর মহিলা তার বুক বরাবর হাত উত্তোলন করবে ।
— তাবরানী (রহঃ) মু'জামুল কাবীর, মাজমাউয যাউয়াইদ হাদিস নং ২৫৯৪ , ইমাম হাইসামী (রহঃ) বলেন এই হাদিসে উম্মু ইয়াহইয়া ব্যতীত সকল রাবী সিকা
★ সাহাবীর আমলঃ
মহিলা সাহাবী হযরত উম্মু দারদা (রাঃ) তাকবীরে তাহরীমাতে কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন । ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ননা করেন
তিনি সালাতে কাঁধ বরবর হাত উঠাতেন ।
— জুযঊ রফউল ইয়াদাইন , হাদিস নং ৫০
★ বিখ্যাত তাবেঈ ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন
মহিলা তার দু হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে
— মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা, হাদিস নং ২৪৭২, হাদিসখানা গ্রহনযোগ্য
★ প্রসিদ্ধ তাবেঈ ইমাম আত্বা ইবনু আবি রাবাহ (রঃ) এর ফাতাওয়াঃ
তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, মহিলা সালাতে হাত কিভাবে উঠাবে ? তিনি বলেন, তার বুক বরাবর ।
— মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা , হাদিস নং ২৪৭১
★ প্রখ্যাত তাবেঈ ইমাম ইবনু সীরিন (রহঃ) এর কন্যা হাফসা (রহঃ) থেকেও উক্ত আমল প্রমানিত । ইমাম ইবনু শাইবা (রহঃ) বর্ননা করেন
হাফসা বিনতে সীরিন (রহঃ) বুক বরাবর হস্তদ্বয় উঠিয়ে তাকবীর বললেন ।
— মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা , হাদিস নং ২৪৭৫
২) তাকবীরে তাহ্রীমা বলিয়া পুরুষ নাভির নিচে হাত বাধিবে । স্ত্রীলোক বুকের উপর (স্তনের উপর ) হাত বাঁধিবে । - তাহ্তাবী -
★ মহিলাগণ তাকবীরে তাহরীমা বলে তাদের হাতকে বুকের উপর জড়সড় অবস্থায় রাখবে । ইমাম ইবন আবি শাইবা (রহঃ) সহীহ সনদে বর্ণনা করেন
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) কে মহিলাদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন- খুব জড়সড় ও অঙ্গের সাথে মিলিয়ে সালাত আদায় করবে ।মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা
— হাদিস নং ২৭৭৮, হাদীসখানা সহীহ
এ হাদীসখানা দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, মহিলারা তাকবীরে তাহরীমা বলা হপর হাত দুখানা বুকে রাখবে ।
★ তাবেঈর বক্তব্য
ইবনু জুরাইজ হযরত আত্বা (রঃ) হতে বর্ননা করেন, তিনি বলেছেন-
মহিলাগণ দাঁড়ানো অবস্থায় সাধ্যমত তার দু’হাত একত্রিত করে রাখবে ।
— মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৫০৬৭
একটু চিন্তা করলেই বুঝা সম্ভব যে, দু’হাত সাধ্যমত মিলিয়ে রাখা তখনই সম্ভব যখন তা একত্রিতবস্থায় বুকের উপরে থাকবে ।
৩) পুরুষ হাত বাঁধিবার সময় ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলী দ্বারা হালকা বানাইয়া বাম হাতের কব্জি ধরিবে এবং ডান হাতের অনামিকা, মধ্যমা ও শাহাদত অঙ্গুলী বাম হাতের কলাইর উপর বিছাইয়া রাখিবে । আর স্ত্রীলোক শুধু ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠের উপর রাখিয়া দিবে, কব্জি বা কলাই ধরিবে না । -দুররুল মুখতার
৪) রুকু করিবার সময় পুরুষ এমনভাবে ঝুঁকিবে যেনো মাথা, পিঠ ও চুতড় এক বরাবর হয় । স্ত্রীলোক এই পরিমাণ ঝুঁকিবে যাহাতে হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে ।
৫) রুকুর সময় পুরুষ হাতের আঙ্গুলগুলি ফাঁক ফাঁক করিয়া হাঁটু ধরিবে । আর স্ত্রীলোক আঙ্গুল বিস্তার করিবে না বরং মিলাইয়া হাত হাঁটুর উপর রাখিবে ।
৬) রুকুর অবস্থায় পুরুষ কনুই পাঁজর হইতে ফাঁক রাখিবে । আর স্ত্রীলোক কনুই পাঁজরের সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে । -মারাকী
৭) সিজদায় পুরুষ পেট উরু হইতে এবং বাজু বগল হইতে পৃথক রাখিবে । পক্ষান্তরে স্ত্রীলোক পেট রানের সঙ্গে এবং বাজু বগলের সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে ।
৮) সিজদায় পুরুষ কনুই মাটি হইতে উপরে রাখিবে । পক্ষান্তরে স্ত্রীলোক মাটির সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে ।-মারাকী-
★ ৭ ও ৮ একসাথে :-
পুরুষগণ সিজদা করার সময় হাতকে পেট, উরু ও জমিন হতে উঠিয়ে রাখবে । আর মহিলাগণ একটিকে অন্যটির সাথে মিলিয়ে জমিনে লাগিয়ে দেবে ।
নবী পাক (সঃ) এর নির্দেশঃ
ইমাম আবু দাউদ, বায়হাকী বর্ণনা করেন
ইয়াযিদ বিন আবি হাবিব (রাঃ) হতে বর্ণিত নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ (সঃ) সালাতরত দু’জন মহিলাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন- তোমরা যখন সিজদা করবে তখন শরীর জমিনের সাথে মিলিয়ে দিবে । কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষের মত নয় ।
— আবু দাউদ মারাসিল হাদিস নং ৮০, বায়হাকী হাদিস নং ৩৩২৫
এ হাদীসের ক্ষেত্রে সালাফী দাবীদারগণের অবস্থান
পাক ভারত উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ লা-মাজহাবী আলেম মাওলানা নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব বলেন- উল্লেখিত হাদীসখানা সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলিল প্রদানের যোগ্য । আওনুল বারী শরহে বুখারী ১/৫২০ এমনকি আলবানী সিলসিলাতুল আহাদিস দ্বয়িফাতে এ হাদীসের ব্যাপারে শুধুমাত্র ইরসাল ছাড়া অন্য কোন দোষ বর্ণনা করতে পারেন নি ।
ইমাম বায়হাকী (রঃ) হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন নবীজী (সঃ) বলেছেন
যখন মহিলা সিজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী । সুনানে কুবরা, হাদিস নং ৩১৯৯
— হাদিসটি হাসান
সাহাবীর বক্তব্য
ইমাম আব্দুর রাজ্জাক হযরত আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন
মহিলা যখন সিজদা করবে তখন যেন খুব জড়সড় হয়ে উরুদ্বয়কে পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে । মুসান্নাফ
— হাদিস নং ৫০৭২
তাবেঈর বক্তব্য
হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন
মহিলা সিজদার সময় এক অংগ অন্য অঙ্গের সঙ্গে মিলিয়ে জড়সড় হয়ে সিজদা করবে ।
— মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবা , হাদিস নং ২৭৯৭
৯) সিজদার মধ্যে পুরুষ পায়ের আঙ্গুলগুলি কেবলার দিকে মোড়াইয়া রাখিয়া তাহার উপর ভর দিয়া পায়ের পাতা দুইখানা খাড়া রাখিবে; পক্ষান্তরে স্ত্রীলোক উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির করিয়া মাটিতে বিছাইয়া
রাখিবে ।-মারাকী
১০) বসার সময় পুরুষ ডান পায়ের আঙ্গুলগুলি কেবলার দিকে মোড়াইয়া রাখিয়া তাহার উপর ভর দিয়া পায়ের পাতাটি খাড়া রাখিবে এবং বাম পায়ের পাতা বিছাইয়া তাহার উপর বসিবে । আর স্ত্রীলোক পায়ের উপর বসিবে না বরং চুতড় নিতম্ব) মাটিতে লাগাইয়া বসিবে এবং উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির করিয়া দিবে; এবং ডান রান বাম রানের উপর এবং ডান নলা বাম নলার উপর রাখিবে ।-মারাকী
১১) স্ত্রীলোকের জন্য উচ্চ শব্দে কেরাআত পড়িবার বা তকবীর বলিবারও এজাযত নাই । তাহারা সব সময় সব নামাজের কেরাআত (তকবীর, তাস্মী ও তাহ্মীদ) চুপে চুপে পড়িবে -শামী
No comments:
Post a Comment